শুক্রবার, ৯ আগস্ট, ২০১৩

সন্তানের ওপর মা-বাবার রক্তের গ্রুপের প্রভাব / blood

মায়ের রক্তের গ্রুপ এবং তাঁর সন্তানের রক্তের গ্রুপ দুটোর সমীকরণের ফলাফল গর্ভস্থ ভ্রূণ বা নবজাতকের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। ধরা যাক, গর্ভধারিণী মায়ের রক্তের গ্রুপ আরএইচ নেগেটিভ এবং তাঁর স্বামীর রক্তের গ্রুপ আরএইচ পজেটিভ। এই যোগসূত্রে আরএইচ পজেটিভ শিশুর জন্ম হতে পারে। এই মা যদি আগে থেকে আরএইচ রক্তকোষ দ্বারা সংবেদনশীল থাকেন, তাহলে গর্ভস্থ আরএইচ পজেটিভ বাচ্চা আরএইচ হিমোলাইটিক অসুখে কোনো না কোনো মাত্রায় আক্রান্ত হবে।
আর মা যদি ডেলিভারির পরে প্রতিক্রিয়ার আওতায় আসেন, সে ক্ষেত্রে পরবর্তী সব আরএইচ পজেটিভ গর্ভস্থ শিশু ঝুঁকিতে থাকবে।
আরএইচ(রিসাস) ব্লাড গ্রুপ
ও-এ-বি ব্লাড সিস্টেমের সাথে কারো শরীরে রক্ত সঞ্চালন কিংবা নবজাতক শিশুতে মারাত্নক হেমোলাইটিক ডিজিস তৈরিতে আরএইচ ব্লাড গ্রুপ খুব গুরুত্বপূর্ণ।
‘এবিও’ রক্তের গ্রুপ সিস্টেম
একদা যুদ্ধক্ষেত্রের অনুমান-পর্যবেক্ষণ—সিদ্ধ তথ্য গবেষণায় সিদ্ধি লাভ করে জানা গেছে, মূল রক্তের গ্রুপ হলো চারটি: ‘এ’, ‘বি’, ‘এবি’ এবং ‘ও’।
n ‘ও’ রক্তের গ্রুপ যেকোনো রক্তের শ্রেণীতে মেশালে তা জমাট বাঁধে না। তাই একে ‘ইউনিভার্সেল ডোনার’ বলা হয়।
n ‘এ’ গ্রুপের রক্ত ‘এ’ অথবা ‘এবি’র সঙ্গে মিশতে পারে যদি তা ‘বি’ বা ‘ও’-এর সঙ্গে মেশে, তবে জমাট বাঁধবে।
n একইভাবে ‘বি’ রক্তকোষ শ্রেণী নিরাপদে ‘বি’ বা ‘এবি’র সঙ্গে মেশানো যায়, কখনো ‘ও’ বা ‘এ’-এর সঙ্গে নয়।
n এবি রক্তের শ্রেণী শুধু এবির সঙ্গে মেশে আর কারও সঙ্গে নয়।
তবে প্রধান এই চার রক্তের গ্রুপ অ্যান্টিজেনের বাইরেও ক্যাপিটাল সি—স্মল সি, ডি, বড় ই-ছোট ই, বড় কে = ছোট কে, এম, এন এবং আরও অনেক জট পাকানো রক্তশ্রেণীর অস্তিত্ব রয়েছে।
আরএইচ ‘ডি’ রক্তের শ্রেণীর গরমিল
ভাগ্য ভালো, সব রক্তশ্রেণী দুর্যোগ তৈরি করে না। কিন্তু ‘ডি’ অ্যান্টিজেনের গরমিলের চিত্র খুব ভয়াবহ হতে পারে।
n তবে মাতা-পিতা দুজনই যদি ‘ডি’ নেগেটিভ হন, বাচ্চা কখনো ‘ডি’ পজেটিভ হবে না। সুতরাং বিপদমুক্ত।
n কিন্তু ‘ডি’ নেগেটিভ মায়ের সঙ্গে ‘ডি’ পজেটিভ স্বামীর যোগসূত্রে বাচ্চা ‘ডি’ পজেটিভ, ‘ডি’ নেগেটিভ দুটোর যেকোনো একটা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ‘ডি’ পজেটিভ বেবি হলেই কেবল বিপদ।
n গর্ভস্থ ভ্রূণ ‘ডি’ পজেটিভ হলেও প্রথম বাচ্চা এতে আক্রান্ত হয় না। প্রথম বাচ্চা জন্মদানের সময় আরএইচ পজেটিভ রক্তকোষজাত অ্যান্টিডি-অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করে, যা পরবর্তী সময়ে গর্ভস্থ শিশু থেকে বা রক্ত সরবরাহতন্ত্রে প্রাপ্ত যেকোনো ‘ডি’ পজেটিভ রক্তকোষ পেলে সমূহ সংহারে উদ্যোগী হয়। এভাবে আরএইচ নেগেটিভ মা তাঁর ডি-অ্যান্টিজেন নিয়ে কতটা সংবেদনশীল হয়েছেন, তার মাত্রা মায়ের গর্ভকালীন সিরাম ইনভাইরেক্ট কুম্বসটেস্ট দ্বারা নির্ণয় করা যায়। প্রতিক্রিয়ার মাত্রা যত বেশি হবে, গর্ভস্থ ভ্রূণ তত বেশি ক্ষতির শিকার হবে; যার সর্বাধিক নমুনা হচ্ছে ‘হাইড্রপস ফিটালিস’।
প্রতিরোধ
n সবাই অবগত আছেন থ্যালাসেমিয়া সন্তান জন্মদান প্রতিরোধে বিবাহপূর্ব রক্ত পরীক্ষা করিয়ে বর বা কনে উভয়ে এ রোগের বাহক কি না জেনে নিয়ে চিকিৎসার আশ্রয় নেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রেও গর্ভপূর্ব হতে মা ও বাবার রক্তশ্রেণী জানা গেলে মা, বাবা ও অনাগত সন্তানের রক্তশ্রেণীর গরমিলজনিত সংকট মোকাবিলায় প্রতিরোধমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করা সহজ।
n সব আরএইচ নেগেটিভ মাকে গর্ভকালীন ২৮ ও ৩৪ সপ্তাহে, প্রসব-পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে, গর্ভপূর্ব সময়ে গর্ভপাত, জরায়ু থেকে রক্তপাত হয়ে থাকলে চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ‘অ্যান্টিডি ইমিউনোগ্লোবুলিন’ দেওয়ার মাধ্যমে ভয়ানক এ অসুখ থেকে অনাগত সন্তানকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব।
প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ২০, ২০১২

কোন মন্তব্য নেই: